The missing painting

তেরো বছর আগের আঁকা একটা ছবি আজ তোমাদের জন্য।
সে বছর লোখন্ডওয়ালার এক মেলায় ঝোঁকের বশে একটা স্টল নিয়েছিলাম—ইচ্ছে ছিল, আমার আঁকা ছবি লোকেদের দেখাই।তা, বেশ অনেকগুলো ছোট ক্যানভাস এঁকে নিয়ে গিয়েছিলাম, একরাশ উৎসাহ আর উদ্দীপনা নিয়ে। খুবই সামান্য দাম রেখেছিলাম—হাজার টাকারও নিচে।
লোকে এলো, দেখল।বহু মহিলা একটু বেশি ঝুঁকে ছবিগুলোর খুব কাছে গিয়ে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করলেন। কারোর মুখে শীতল ভাব—কেউ কেউ যেন বললেন, “এরকম তো অনেক দেখেছি”, আবার কারও ভাবখানা এমন, “সেবার প্যারিসে গিয়ে আসল মোনালিসা দেখেছি আর তুই কিনা আমাকে ছবি দেখাচ্ছিস!” বিচিত্র সব আচার-আচরণ।
সুদীর্ঘ মার্সিডিসে করে আসা এক আপাত-ধনী ভদ্রলোক বহুক্ষণ ছবির গুণমান বিচার করার পর ভাবলেশহীন হয়ে চপ খেতে চলে গেলেন।
ভদ্রলোক পরের দিন ফোন করলেন—”আচ্ছা, অমুক ছবিটা ছিল, ওটার দাম কত?” আমি বললাম, “৭০০ টাকা মাত্র।তারপর “আচ্ছা, জানাচ্ছি” বলে রেখে দিলেন। আর কোনোদিন ফিরে আসেননি।
সেদিন আমার একটাও ছবি কারও মন কাড়েনি। সে যাকগে—শিল্পীদের এসব সইবার অভ্যেস থাকে।
এই মায়াময় মহিলার মুখটাই হল সেদিনের সেই অবিক্রীত ছবি। তারপর এ ছবি আমার সঙ্গে আমেরিকাও ঘুরে এসেছে—কিন্তু কেন জানি না, ছবিটা ঘর পায়নি। পোড়া কপাল।
এই ছবিটা এখন আমার কাছেও নেই।দুঃখে, অপমানে সে নিরুদ্দেশ। সে আজ ঘরছাড়া।আমি যতবার পুরনো ছবি নিয়ে বসেছি, খানিক থেমে এই ছবিটা বহুবার দেখেছি।নিতান্তই সহজভাবে আঁকা একটা ছবি—প্রায় যেন ক্যানভাসে তুলি মোছার মতো করে আঁকা।
কিন্তু সে সব বাদ দিয়েও ছবিটায় কিছু একটা আছে—যা আমাকে থামিয়েছে বারবার।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবরের ওপর লেখা তার কবিতাটার মতো ছবিটা আমাকে বলে…
“দাঁড়াও পথিকবর… জন্ম যদি তব বঙ্গে, তিষ্ঠ ক্ষণকাল…”
‘বঙ্গ’ এখানে অপ্রাসঙ্গিক হলেও, ‘তিষ্ঠ ক্ষণকাল’ বেশ প্রাসঙ্গিক।
[এই বিজ্ঞাপনের পর ছবিটি শিকাগো তে খুঁজে পাওয়া যায়😄]
Acrylic on canvas
Size: 6”x10”
Status: missing.